Friday, October 15, 2010

Is this series only Shakib vs newzeland  সাকিবময় ম্যাচ, সিরিজও

সাকিব আল হাসানও তাহলে নার্ভাস হন?
সাকিব বাংলাদেশের আর দশটা গড়পড়তা ক্রিকেটার বা মানুষের মতো নন। সেটা শুধু খেলায় বা আচরণে নয়, দর্শনেও। মোটামুটি প্রতিষ্ঠিত হয়ে গেছে যে তিনি আবেগ, উত্তেজনা, স্নায়ুপীড়ন, রোমাঞ্চ— এই জাতীয় ব্যাপারগুলোর ঊর্ধ্বে। সেই সাকিব যখন স্নায়ুর কথা বলেন, একটু নড়েচড়ে বসতেই হয়। ৪৯তম ওভারের প্রথম বলে চার খেয়ে নাকি একটু নার্ভাস হয়ে পড়েছিলেন সাকিব।
পর মুহূর্তেই অবশ্য বোঝা গেল, ‘তিনি রক্ত-মাংসের মানুষ’, ওই নার্ভাসনেস স্রেফ এটুকু প্রমাণের জন্যই। দৃপ্তকণ্ঠে বলছেন, ‘জানতাম, আমার ফিরে আসার ক্ষমতা আছে। তাই বিশ্বাস হারাইনি।’ সাকিব এখাইে আলাদা। ভয়ডর একটু তাঁরও লাগে, তবে সেটাকে চড়ে বসতে দেন না। বরং ভয়কে জয় করতে ঝাঁপিয়ে পড়েন বিপুল বিক্রমে। কালই দেখুন না, মহা গুরুত্বপূর্ণ ৪৯ নম্বর ওভারটি করলেন তিনি নিজেই। প্রথম ২ বলে ছয় রান দেওয়ার পরও ঘাবড়ে না গিয়ে ঠান্ডা মাথায় করে গেলেন নিজের কাজ। পরের চার বলে রান হলো মাত্র দুটি, উইকেট পড়ল দুটি।
ম্যাচের পরিপ্রেক্ষিতে গুরুত্বপূর্ণ বলেই এই ওভারটির কথা আগে বলা। এই ওভারটিতে গড়বড় হয়ে গেলে দুরন্ত সেঞ্চুরি বা আগের ২ উইকেট, কোনো কিছুরই মূল্য থাকত না। কিন্তু ওই ওভারেই পেন্ডুলামের মতো দুলতে থাকা ম্যাচ চলে এল বাংলাদেশের মুঠোয়। দুর্দান্ত অলরাউন্ড পারফরম্যান্স, আরও একবার ম্যান অব দ্য ম্যাচের পুরস্কার, অধিনায়ক হিসেবে সিরিজ জয়—পূর্ণতা পেল সাকিবের দিনটা। প্রথম ম্যাচেও ফিফটি ও চার উইকেট নিয়ে জিতিয়েছিলেন দলকে, সিরিজে সর্বোচ্চ রান (১৭৭) ও উইকেটও (৯) এখন তাঁর।
ব্যক্তিগত অর্জনও আরও আছে। এই সেঞ্চুরিতেই শাহরিয়ার নাফীসকে (৪) টপকে ওয়ানডেতে বাংলাদেশের সর্বোচ্চ সেঞ্চুরিয়ান (৫) হয়ে গেলেন। শাহরিয়ারকে (৩৩.৮৭) টপকে বাংলাদেশের পক্ষে ওয়ানডেতে সবচেয়ে বেশি ব্যাটিং-গড়ও আপাতত এখন সাকিবের (৩৪.৩১)। কমপক্ষে ১০ ম্যাচ খেলেছেন, এমন ক্রিকেটারদের মধ্যে তাঁর বোলিং-গড় এখন দ্বিতীয় সেরা (২৯.৫৭)। কালই টপকেছেন অকালপ্রয়াত মানজারুল ইসলামকে (২৯.৯৫), সামনে কেবল আবদুর রাজ্জাক (২৮.৬২)। আর আরেকটু প্রতিষ্ঠিত করেছে প্রচলিত একটি ধারণাকেও—‘অধিনায়কত্ব সাকিবের সেরাটা বের করে আনে।’ প্রমাণ? নেতৃত্ব দেওয়া ২৮ ম্যাচে তাঁর ব্যাটিং-গড় ৩৭.৩৯, ৫ ওয়ানডে সেঞ্চুরির ৩টিই নিজের অধিনায়কত্বে। ‘সাধারণ’ ক্রিকেটার হিসেবে খেলা ম্যাচগুলোয় রেকর্ডটাও একটু সাধারণ, ৬৯ ম্যাচে সেঞ্চুরি দুটি, ব্যাটিং-গড় ঠিক ৩৩। ক্যারিয়ার-সেরা বোলিংটাও (৩৩ রানে ৪ উইকেট) নিজের অধিনায়কত্বে। এ জন্যই সময়ের জনপ্রিয়তম ক্রিকেটারও হয়তো তিনিই। সামান্য নমুনা শুনতে চান?
হামিশ বেনেটের বলে ‘প্লেড অন’ হয়ে ফিরছেন রকিবুল হাসান, একটু নীরবতার পর গ্যালারিতে হঠাৎ উল্লাস। কারণ? ব্যাট হাতে মাঠে ঢুকছেন সাকিব। গ্যালারির উল্লাস গর্জনে রূপ নিল একটু পর, প্রথম বলেই চার। এর পর থেকে সারা দিন বাংলাদেশ অধিনায়কের সৌজন্যে গ্যালারি গর্জেছে অসংখ্যবার। লোকে তাঁকে ভালোবাসবে না তো কাকে ভালোবাসবে!

1 comment: